Ishoper Golpo - HM Alamgir Rahman । ঈশপের গল্প  -  এইচ এম আলমগীর রহমান

Ishoper Golpo - HM Alamgir Rahman । ঈশপের গল্প - এইচ এম আলমগীর রহমান

Size
Price:

Read more

           



নাম: ঈশপের গল্প  -  এইচ এম আলমগীর রহমান

Title: Ishoper Golpo - HM Alamgir Rahman

Author:  HM Alamgir Rahman

লেখকঃ এইচ এম আলমগীর রহমান

Publishing:  অনুবাদ

প্রকাশনীঃ অনুবাদ

ঈশপের গল্প 

ঈশপের চমৎকার ও সাবলীল ভাষায় সৃষ্টিকৃত গল্প বা উপকথাগুলো হচ্ছে মানুষের কাছে উপদেশ বা নীতিকথা পৌঁছে দেয়ার অন্যতম মাধ্যম। তাঁর নামে প্রায় কয়েক শতাধিক উপকথা প্রচলিত আছে। তাঁর গল্পগুলোর মাঝে অন্যতম ছিল কাঁক ও খেঁকশিয়াল, আঙ্গুর ফল টক, রাজহাঁস ও সোনার ডিম, খরগোশ ও কচ্ছপের দৌড় প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।

ছোটবেলায় প্রথম যে বইটি পড়ে দুনিয়ায় টিঁকে থাকার রীতি-নীতি সম্পর্কে জানতে পারি সেটি ছিল ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর-এর করা ঈশপ-এর গল্পের অনুবাদ – ‘কথামালা’। আমার বাবার আমাকে প্রথম উপহার যা আমার মনে পড়ে। বইটি হারিয়ে গেছে। গল্পগুলি রয়ে গেছে মনের ভিতর। যত বড় হয়েছি, গল্পগুলি তত বেশী করে অনুভব করেছি। আবার কখনো কখনো সেগুলি থেকে অন্য রকমের মজা পেয়েছি। সম্প্রতি ইচ্ছে হচ্ছিল গল্পগুলি ফিরে পড়ার। ভাবলাম, আপনাদের-ও সঙ্গী করে নি-ই। ইংরেজী পাঠের অনুসারী বঙ্গানুবাদ করেছি, তবে আক্ষরিক নয়। সাথে ফাউ হিসেবে থাকছে আমার দু-এক কথা।


(১)The Wolf Turned Shepherd
রাখাল সাজা নেকড়ে
ধরা খাওয়ার ভয়ে এক নেকড়ে কিছুতেই ভেড়ার পালের কাছ ঘেঁষতে পারে না। তখন জামা-কাপড় চাপিয়ে সে এক রাখাল সেজে নিল। এইবার সে সোজা চলে এল ভেড়াগুলোর পাশে। আসল রাখাল তখন ঘুম লাগাচ্ছে আর ভেড়াগুলো নিশ্চিন্তে ঘাস খাচ্ছে। মুস্কিলটা হল ভেড়া পাকড়াতে গেলে অন্ততঃ কোন একটাকে দলছুট করা দরকার! নেকড়ে-রাখাল তাই আসল রাখাল-এর মত হুস-হাস আওয়াজ করে ভেড়াগুলোকে এদিক ওদিক ভাগানোর তাল করল। তাতে লাভ হল এই – গলা দিয়ে নেকড়ের হাউ-হাউ বেরিয়ে এল। ব্যাস, রাখাল গেল জেগে। পিটুনির চোটে নেকড়ে শেষ।
নীতিশিক্ষাঃ ছদ্মবেশ ধরে কাজ করতে গেলে বাড়াবাড়ি হয়ে যাবেই (আর সব পণ্ড হবে)
আমি আরো বলিঃ মুখ খুলতে দিলেই ধরা পরবে কার ছাল গায়ে কে এসেছে।

(২)The Stag at the Pool
জলের ধারের শিঙেল হরিণ
মাঠের ধারে দিঘীর জলে নিজের ছায়ায় বাহারী শিং-এর রূপ দেখে দেখে এক শিঙেল হরিণ একেবারে মুগ্ধ। কিন্তু মেজাজ খিঁচড়ে দিল তার কুচ্ছিৎ দেখতে কাঠি কাঠি পা-গুলো। এমন সময় এক সিংহ এসে হাজির সেই জলের ধারে। হরিণ তখন একটু আগে দুচ্ছাই করা ঐ পাগুলোরই ভরসায় দে দৌড়, দে দৌড়। বেঁচে গিয়েওছিল প্রায়। মারা পড়ল জঙ্গলে ঢুকে গাছপালায় শিং জড়িয়ে গিয়ে। সিংহের হাতে মরতে মরতে হরিণ আফশোষ করল – “কী হতভাগা আমি! বুদ্ধুর বুদ্ধু! যে পাগুলো আমায় বাঁচাতে পারত সেগুলোকেই গাল পাড়ছিলাম, আর যে শিংগুলো নিয়ে এত গর্ব করছিলাম সেগুলোর জন্যই শেষে মারা পড়লাম।”
নীতিশিক্ষাঃ আসলেই যা দামী, প্রায়ই তার ঠিকমত কদর হয় না।
আমি আরো বলিঃ অহংকারীরা তাদের দুর্বলতার হদিশ পায় না বলেই তাদের পেড়ে ফেলা যায়।

(৩)The Fox and the Mask
শেয়াল ও মুখোশ
এক শেয়াল একবার এক নাটুয়ার বাড়ি ঢুকে পড়ল। মাল-পত্তর ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে পেয়ে গেল একটা মুখোশ। মানুষের মুখের এক চমৎকার নকল। শেয়ালটা থাবা দিয়ে ঐ মুখোশ নাড়াচাড়া করতে করতে বলে উঠল – “কি সুন্দর মাথা একটা। কিন্তু কোন দাম নেই এর কারণ এটার ভিতরে এক ছটাকও মগজ নেই। ”
নীতিশিক্ষাঃ বুদ্ধি ছাড়া সুন্দর মুখের দাম সামান্যই।
আমি আরো বলিঃ শিল্পের দাম বুঝলে শেয়াল তো মানুষ-ই হয়ে যেত!

(৪)The Bear and the Fox
ভালুক আর শেয়াল
এক ভালুক-এর খুব ইচ্ছা সবাইকে জানায় কি বিরাট পরোপকারী আর দয়ালু স্বভাব তার। এই নিয়ে বক্তালি করতে গিয়ে সে জানাল যে সমস্ত পশুপাখীর মধ্যে সে-ই মানুষকে সবার চেয়ে বেশী সম্মান দ্যায় কারণ সে কখন-ও কোন মরা মানুষ নিয়ে টানাটানি করে না।
এক শেয়াল সে সব শুনে মুচকি হেসে ভালুকটাকে বলে, “হুঁঃ! সবসময় জ্যান্ত মানুষ খাওয়ার বদলে তুমি যদি মরা মানুষ খেতে সেটাই বরং তাদের পক্ষে ভাল হত।”
নীতিশিক্ষাঃ না মরলে দ্যায় না, অমন সম্মান দেওয়ার কোন মানে হয় না।
আমি আরো বলিঃ শিয়ালের উস্কানিতে মরা সেজেও আর ভালুকের হাত থেকে বাঁচা যাবে না!

(৫)The Wolf and the Lamb
নেকড়ে ও ভেড়ার গল্প
ঘুরতে ঘুরতে এক নেকড়ে একটা দলছুট ভেড়াকে একলা পেয়ে গেল। নেকড়ের ইচ্ছে হল বেশ মহত্ব দেখায়। ভেড়াটার উপর কোন হামলা না চালিয়ে বরং কিছু যুক্তি-তক্ক দিয়ে সেটাকে বুঝিয়ে দেওয়া যাক যে ভেড়াটাকে খাওয়ার ব্যাপারটা নেকড়ের হক-এর মধ্যেই পড়ে। সে ভেড়াটাকে বলল
“এই যে মশায়, গেল সনে আপনি আমাকে বিস্তর অপমান করেছিলেন।”
ভেড়াটা ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলল “কিন্তু, আমার তো গত বছর জন্মই হয়নি!”
নেকড়েটা তখন বলে, “হতে পারে। কিন্তু, আমার মাঠের ঘাস খাও তুমি”
“না হুজুর,” ভেড়া উত্তর দ্যায়, “ঘাস খেতে কেমন তাই আমি জানি না এখনো।”
নেকড়ে ছাড়ে না, “তুই আমার কুয়ো থেকে জল খাস। ”
“না, না,” আর্তনাদ করে ওঠে ভেড়াটা, “আমি এখনো এক ফোঁটা জল ও মুখে দিইনি। আমি ত এখনো শুধু মা’র দুধ খাই! ”
“হুম! আমার সব অভিযোগ-এর তুই ভালই জবাব দিয়ে দিয়েছিস। কিন্তু, তা বললে তো আর আমার পেট চলবে না।” এই বলতে বলতেই ভেড়াটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে শয়তান নেকড়ে তাকে টুকরো টুকরো করে খেয়ে ফেলল।
নীতিশিক্ষাঃ অত্যাচারী সবসময়ই অত্যাচার করার জন্য কিছু না কিছু কারণ খুঁজে বার করে ফেলে।
আমি আরো বলিঃ যারা কোন কথা শুনবে না ঠিক করেই রেখেছে, তাদের সাথে যুক্তি-তর্কে গিয়ে ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই।


ঈশপের গল্প (৬ – ১০)

৬)The One-Eyed Doe
এক চোখ-নষ্ট হরিণ-এর গল্প
এক হরিণ-এর একটা চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। দেখতে না পাওয়া বিপদ-এর হাত থেকে বাঁচতে সে সমুদ্রের ধারের মাঠে ঘাস খেয়ে বেড়াত। তার ভাল চোখটা সে ফিরিয়ে রাখত ডাঙ্গার দিকে যাতে কোন শিকারী বা শিকার ধরা কুকুর এলে দূর থেকেই তাকে দেখতে পেয়ে যায়। সমুদ্রের দিক থেকে সে কোন বিপদের ভয় করত না। তাই তার নষ্ট চোখটা সে ঐ দিকে রেখে রেখে চরে বেড়াত। একদিন সমুদ্রে সেই এলাকা দিয়ে নৌকা বেয়ে যাচ্ছিল কিছু লোক। তারা হরিণটাকে দেখতে পেয়ে অনায়াসে তাক করে তাকে মেরে ফেলল।
মরার সময় হরিণটা বলে গেল, “কি দুর্ভাগা আমি! ডাঙ্গার দিক থেকে যাতে বিপদে না পড়ি তার জন্য কত ব্যবস্থা নিলাম, এমনকি এই সাগরের ধারে চলে এলাম, ভেবেছিলাম বেঁচে গেলাম, উল্টে আরো সহজে মারা পড়লাম।”
প্রাচীন বচনঃ যে দিক থেকে সবচেয়ে কম সন্দেহ করা যায়, অনেক সময় সেদিক থেকেই বিপদ ঘনিয়ে আসে।
আমি বলিঃ অন্ধ বিশ্বাস পতন ঘটায়। যুক্তি দিয়ে সবসময় সবদিকে নজরদারী জারী রাখতে লাগে।

(৭)The Dog, Cock and Fox
কুকুর, মোরগ আর শিয়াল-এর গল্প
এক কুকুর আর তার সাথী এক মোরগ। দু’জনে মিলে ঘুরতে বেড়িয়েছিল। ঘুরতে ঘুরতে রাত হয়ে গেল। তখন তারা আশ্রয়ের জন্য ঘন বনের মধ্যে চলে এল। মোরগ চড়ে বসল এক গাছের অনেক উঁচু একটা ডালে আর কুকুর সেই গাছের নীচে তার বিছানা পেতে নিল। ভোর হলে, যেমন সে রোজ করে, মোরগ ডেকে উঠল কোঁকড়-কো করে। সেই আওয়াজ শুনে এক শিয়ালের মনে হল সকালের নাস্তাটা আজ মোরগের মাংসে সেরে ফেললে খাসা হয়। শিয়াল তখন ঐ ডালটার নীচে চলে এল আর নানাভাবে মোরগের মিষ্টি গলার আওয়াজের সুখ্যাতি করে তার সাথে দোস্তি পাতাতে চাইল।
“আপনি রাজী থাকলে,” বলল সে মোরগকে, “আজকের দিনটা আপনার সাথে কাটাতে পারলে আমার খুব ভাল লাগবে।”
মোরগ বলল, “মশায়, এক কাজ করেন, একটু এগিয়ে এই গাছের গোড়ায় চলে যান। আমার মালপত্র যে টানে সে ঐখানে ঘুমিয়ে আছে। তারে ডেকে তোলেন, সে আপনাকে এখানে আসার জন্য দরজা খুলে দিবে।”
শিয়ালকে ঐদিকে আসতে দেখেই কুকুর একেবারে লাফ দিয়ে উঠল আর শিয়ালের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলল।
প্রাচীন বচনঃ অন্যদের যারা ফাঁদে ফেলতে চায়, প্রায়ই তারা নিজেরাই নিজেদের ফাঁদে পড়ে যায়।
আমি বলিঃ চেনা শয়তান যখন ভাল কথা বলে মন ভোলায়, জেনে রেখো সে তোমায় ডোবানোর ফন্দী আঁটছে।

(৮)The Mouse, the Frog, and the Hawk
ইঁদুর, ব্যাঙ, আর বাজপাখীর গল্প
এক ইঁদুর, এমনই কপাল খারাপ তার, এক ব্যাঙ-এর সাথে জিগরী দোস্তি পাতিয়ে বসল। ব্যাঙটা একদিন, মাথায় নষ্টামি বুদ্ধি চাপলে যা হয়, ইঁদুরটার এক পায়ের সাথে নিজের এক পা আচ্ছা করে বেঁধে ফেলল। তারপর টানতে টানতে তাকে নিয়ে চলল সে নিজে যেই পুকুরে থাকত সেখানে। পুকুর-পাড়ে পৌঁছে, হঠাৎ সে ঝপাং করে দিল লাফ, ইঁদুর-সুদ্ধ সোজা জলে গিয়ে পড়ল। জলে পড়ে সেই ব্যাঙের সে কি মাতামাতি! সাঁতরাচ্ছে, ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর করে ডাকাডাকি করছে, যেন এক বিরাট কাজ করে ফেলেছে সে। ইঁদুরটা কি কষ্ট যে পেল! খানিকক্ষনের মধ্যেই জলে ডুবে, দম আটকে মারা গেল বেচারা। তার শরীরটা জলে ভাসতে থাকল। তখনো ব্যাঙের পা-এর সাথে তার পা বাঁধা। উড়তে উড়তে এক বাজপাখীর নজরে পড়ল সেই জলে-ভাসা ইঁদুর। ছোঁ মেরে নেমে এসে ইঁদুরটা নিয়ে সে উঠে গেল ঐ-ই-ই উঁচুতে। ইঁদুরের পায়ে পা বাঁধা থাকায় সেই ব্যাঙ-ও তখন বাজ-এর থাবায় বন্দী। এর পর ইঁদুরের সাথে সাথে ব্যাঙটা-ও চলে গেল বাজ-এর পেটে।
প্রাচীন বচনঃ যেমন কাজ তার তেমন ফল।
আমি বলিঃ যে পাজী সে হয়ত ছাড়া পাবে না, কিন্তু তার হাতে নিজেকে ছেড়ে দ্যায় যে হতভাগা সে মারা পড়বে সবার আগে।

(৯)The Dog and the Oyster
এক কুকুর আর ঝিনুক-এর গল্প
এক কুকুর খুব ডিম খেতে ভালবাসত। একদিন সে একটা অয়স্টার বা দুই-খোলের ঝিনুক কুড়িয়ে পায়। ঝিনুকটাকে ডিম ভেবে মুখখানা এত্তবড় হাঁ করে সে ওটাকে গিলে ফেলল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভয়ানক পেটের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে সে আর্তনাদ করতে থাকে, “এমন বুদ্ধু আমি, গোল দেখলেই ভাবি ডিম, আমার এইরকম চরম কষ্টই পাওয়া উচিত।”
প্রাচীন বচনঃ হড়বড়িয়ে কাজ করে, পস্তাতে হয় পরে পরে।
আমি বলিঃ হড়বড়াং – চিৎপটাং – মন্তব্য লাফাং – ডুপ্লি ঘ্যাচাং – কপাল চাপ্রাং – ঠাং-ঠাং-ঠাং

(১০)The Wolf and the Shepherds
এক নেকড়ে আর ভেড়া চড়ানো রাখালেরা
রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল এক নেকড়ে। একটা বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সে দেখে বাড়ির মধ্যে ভেড়া চড়ানো রাখালের দল রাতের খাবার সারছে গাদা গাদা মাংস দিয়ে। নেকড়েটা তাই দেখে সেই রাখালদের ডেকে বলল, “এই কাজটাই যদি আমি করতাম, চ্যাঁচামেচি করে তোমরা দুনিয়া মাথায় তুলে ফেলতে।”
প্রাচীন বচনঃ লোকেরা নিজেরা যা করে সেটাই অন্য কেউ করলে তখন তাকে দোষ দিতে থাকে।
আমি বলিঃ নিজের বিশ্বাসটাই শুধু ঠিক বলে যারা জাহির করে, তারাই অন্য লোকেরা একই রকম করলে সেই লোকেদের মুখ বন্ধ করে দিতে চায়।


ঈশপের নীতিগল্পগুলি পড়েছি অনেক ছোটবেলায়। যত বড় হয়েছি, গল্পগুলি তত বেশী করে অনুভব করেছি। সম্প্রতি ইচ্ছে হ’ল সে’গুলি ফিরে পড়ার, ধরে রাখার – নিজের মত করে ।
ইংরেজী পাঠের অনুসারী বঙ্গানুবাদ, আক্ষরিক নয়। সাথে আমার দু-এক কথা।

(১১)The Hares and the Frogs
খরগোশ-এর দল আর ব্যাঙ-দের গল্প
খরগোশদের সবকিছুতে এত ভয় করে! আর সেই কবে থেকে যে তারা জেনে গেছিল – সবসময় হুঁশিয়ার হয়ে থাকতে হবে তাদের! একসময় খুব দুঃখ হল তাদের, আর সহ্য হয়না এ যন্ত্রণা। এক ধাক্কায় এবার সব মিটিয়ে ফেলা দরকার, একটা হু-ই-ই উঁচু খাড়াই পাহাড় থেকে নীচের হ্রদের গহীন জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সব শেষ করে দিলেই পরম শান্তি। দলে দলে হ্রদের দিকে চলল তারা। তাদের এত এত পায়ের আওয়াজে জলের ধারে সার দিয়ে বসে থাকা ব্যাঙদের মনে ভীষন ভয় ধরে গেল। বাঁচবার জন্য হুড়মুড় করে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে তারা ডুব লাগাল গভীর জলের নীচে। ব্যাঙেদের এইভাবে দুদ্দাড় করে হাওয়া হয়ে যেতে দেখে, খরগোশদের একজন বলে উঠল, “আরে দাঁড়াও, দাঁড়াও দোস্তোরা সব, বাদ দাও যা করতে যাচ্ছিলে, দেখতেই পাচ্ছ, আমাদের থেকেও অনেক ভীতুরা দিব্যি বহাল তবিয়তে বেঁচে আছে।”
প্রাচীন বচনঃ আমাদের থেকেও যারা অসহায় অবস্থায় আছে তাদের দেখলে নিজেদের উপর আস্থা জেগে ওঠে।
আমি বলিঃ পালিয়ে যাওয়া ছাড়া যারা বাঁচতে জানে না, সামান্যতম আশঙ্কাতেই তারা লাফিয়ে পালিয়ে যাবে। একবার থেমে দেখবেও না ঘটনাটা কি! কি হবে তাদের দিয়ে!
(১২)The Lion and the Boar
সিংহ আর শুয়োরের গল্প
এক গ্রীষ্মের দিন। ভয়ানক গরমের চোটে তেষ্টায় সবার অবস্থা কাহিল। এক সিংহ আর এক শুয়োর এক সাথে এসে হাজির ছোট এক কূয়োর ধারে। কে আগে জল খাবে এই নিয়ে দুজনের মধ্যে লেগে গেল তুমুল ঝগড়া। তারপর সেই ঝগড়া থেকে শুরু হল মারামারি, মরণপণ – প্রাণ থাকতে অন্যজনকে আগে জল খেতে দেবে না। লড়তে লড়তে একসময় দুজনেই একটু থেমেছে, দম নিয়ে নিতে – আরো ভয়ংকর হিংস্র লড়াই লড়ার জন্য। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে একটু তফাতে সার দিয়ে বসে আছে – শকুনেরা, ভূরিভোজের অপেক্ষায়। অচল হয়ে যেই একজন শুয়ে পড়বে, সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়বে তার উপরে। এই দেখে দুজনেই সঙ্গে সঙ্গে তাদের যুদ্ধ থামিয়ে দিল, বললঃ “আমাদের বরং দোস্তি করে নেওয়াই ভাল। না হলে তো কাক শকুনের খাদ্য হতে হবে, স্রেফ আমাদের দম ফুরিয়ে পড়ে যাওয়ার অপেক্ষা।”
প্রাচীন বচনঃ একদল যখন লড়াই করে আরেকদল তখন তাদের উপর নজর রাখে, লড়িয়েদের কেউ একজন হেরে গেলেই তার হার থেকে তারা তখন নিজেদের ফায়দা তুলবে।
আমি বলিঃ এযুগের ধান্দাবাজ শকুনেরা আর শুধুই দর্শক নয়, তারাই লড়াইগুলোর আয়োজন করে। ধর্মের নামে, ইজ্মের নামে, দলের নামে, শতেক অজুহাতে, তারাই আমজনতাকে লড়িয়ে দ্যায় পরস্পরের বিরুদ্ধে। তারপর ফায়দা তোলে সকলের দুরবস্থা থেকে।
(১৩)The Mischievous Dog
নচ্ছার কুকুরের গল্প
এক কুকুর লোকজন দেখলে চুপচাপ তাদের দিকে তেড়ে যেত, তারপর তারা কিছু টের পাওয়ার আগেই তাদের গোড়ালিতে কামড় বসাত। কুকুরটার মালিক মাঝে মাঝে তার গলায় একটা ঘন্টা বেঁধে দিত যাতে সে কোথাও গেলে চারপাশের সবাইকে জানিয়ে দিতে বাধ্য হয় যে সে এসে গেছে। আবার মাঝে মাঝে তার গলায় একটা শিকল বেঁধে সেই শিকলে একটা ওজনদার ভার ঝুলিয়ে দিত যাতে সে লোকজনকে কামড়ানোর জন্য ছুট লাগাতে না পারে।
কুকুরটা দিনে দিনে তার এই ঘন্টা আর ভার-টা নিয়ে খুব অহঙ্কারী হয়ে উঠল। ওগুলো নিয়ে সেই বাজার এলাকার সব জায়গায় সে দেখিয়ে বেড়াত। তখন এক বুড়ো শিকারী কুকুর একদিন তাকে ডেকে বলল, “এত নিজেকে দেখিয়ে বেড়ানোর কি হয়েছে তোর? যে ঘন্টা আর ভার-টা ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াস, সেগুলো কোন সম্মান-পদক নয়, বরং, অপমানের চিহ্ন। সব্বাইকে জানিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা যে তুই একটা নচ্ছার স্বভাবের কুকুর।”
প্রাচীন বচনঃ কোনভাবে তাকে নিয়ে কথা হলেই অনেকে সেটাকে সুখ্যাতি ভেবে ভুল করে বসে।
আমি বলিঃ দেশের সেবার নামে মাস্তানি করে আহাম্মকেরা ভাবে লোকেরা তাদের মাথায় করে রেখেছে। পরের ভোটে হারার আগে বোঝেনা লোকেরা আসলে তাদের কি চোখে দেখছে।
(১৪)The Quack Frog
এক হাতুড়ে-ডাক্তার ব্যাঙ-এর গল্প
এক ব্যাঙ একদিন বনের সব জন্তু-জানোয়ারদের ডেকে জানিয়ে দিল যে সে সবার সব রোগ সারিয়ে দিতে পারে। এক শিয়াল তখন তাকে জিজ্ঞেস করল, “সকলের জন্য নিদান দেওয়ার ভান কর কি করে হে? নিজের খোঁড়াদের মত লাফিয়ে চলা আর কুঁচকানো চামড়া-টাই তো তুমি সারাতে পার না?”
প্রাচীন বচনঃ অন্যের স্বভাব শোধরানোর আগে নিজেকে শোধরালে লোকের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে।
আমি বলিঃ ঠিকমত চেপে না ধরা পর্যন্ত সব-জান্তা ভন্ডরা দিব্যি তাদের লোক-ঠকান ব্যাবসা চালিয়ে যেতে থাকে।
(১৫)The Ass the Fox, and the Lion
গাধা, শিয়াল আর সিংহের গল্প
এক গাধা আর এক শিয়াল জোট বাঁধল যে তারা একসাথে খাবার জোগাড় করবে। বনে ঢুকতেই তারা দেখে এক সিংহ আসছে। শিয়াল তাড়াতাড়ি সিংহের কাছে গিয়ে তাকে কথা দিল যে সিংহ যদি শিয়াল-কে না মারে তবে সে গাধাকে তার হাতে তুলে দেবে। সিংহ রাজী হয়ে গেল – শিয়ালের কোন ক্ষতি সে করবে না। শিয়াল তখন গাধাকে পথ দেখানোর ছল করে এক গভীর গর্তে নিয়ে গিয়ে ফেলল। সিংহ যেই দেখল যে গাধার ব্যবস্থা হয়ে গেছে তখন প্রথমেই থাবা মেরে শিয়ালটাকে খেল, আর তারপর ধীরেসুস্থে সময় নিয়ে গাধাটাকে ধরল।
প্রাচীন বচনঃ বিশ্বাসঘাতকের কপালে বেইমানি-ই জোটে।
আমি বলিঃ সময় থাকতে বেইমানদের মুখোশ খুলে তাদের থেকে সরতে না পারলে নিজের ধ্বংস অনিবার্য।

(১৬)The Wolf and the Sheep
নেকড়ে আর ভেড়ার গল্প
এক নেকড়ের একদিন খুব শরীর খারাপ করেছে, নড়তে-চড়তে পারছে না। ব্সে থাকতে থাকতে একসময় দেখে এক ভেড়া যাচ্ছে সেখান দিয়ে। নেকড়েটা তাকে ডেকে কাছের ঝর্ণা থেকে জল এনে দেওয়ার অনুরোধ জানালো। “জল এনে দিলেই হবে,” ভেড়াটাকে বলল সে, “মাংসের যোগাড়টা আমি নিজেই করে নিতে পারব।” “হ্যাঁ, তার আর সন্দেহ কি,” ভেড়া শুনে বলে, “আমি তোমায় একটি আঁজলা জল এনে দিলেই হবে। তার পরে এই আমাকে দিয়েই মাংস জোগাড় করার কাজটাও তোমার এমনিই হয়ে যাবে।”
প্রাচীন বচনঃ ধোঁকাবাজী কথা সহজেই ধরা পড়ে যায়।
আমি বলিঃ তোমাকে মেরে যার লাভ আছে, সে যখন নিরীহ কথা বলে কাছে ডাকে, নিশ্চিত জেনো সেটা ফাঁদ, একবার বিশ্বাস করেছ কি মরেছ।
(১৭)The Cock and the Jewel
এক মোরগ আর একটা খুব দামী মণি
এক মোরগ খাবার খুঁজছিল। নিজে খেতে হবে, বাচ্ছাদেরও খাওয়াতে হবে। এখানে ওখানে খোঁজাখুঁজি করতে করতে হঠাৎ তার নজরে আসে বাহারী এক মণি – অত্যন্ত দামী। মণিটা দেখে মোরগ বলল, “ মণি রে, আমার বদলে তোর মালিক যদি তোকে এখন পেত, আদর করে তুলে নিত তোকে, সাজিয়ে রাখত তোকে কত মর্যাদা দিয়ে। কিন্তু আমার কাছে তোর কোন দাম-ই নেই। দুনিয়ার সমস্ত মণি এনে দিলেও আমি বরঞ্চ চাইব একটা শস্যের দানা।”
প্রাচীন বচনঃ একটা অতি দামী জিনিষ ও তার কাছে অর্থহীন যে লোক সেটাকে কোন কাজে লাগাচ্ছে না।
আমি বলিঃ বিশ্বাসে নির্ভর করেই যারা চলবে ঠিক করেছে, যুক্তি-তর্কের মহাজ্ঞানে তাদের কিছু যায়-আসে না।
(১৮)The Two Pots
দুই কলসীর গল্প
নদীতে ভাসতে ভাসতে চলেছে দুই কলসী। এক কলসী মাটির, এক কলসী পিতলের। স্রোতের টানে ভেসে যেতে যেতে মাটির কলসী পিতলের কলসীকে বলে, “প্রার্থনা করি রে ভাই, দূরে দূরে থাক, আমার দিকে আসিস না তুই। আলতো করেও যদি একবার ছুঁয়ে ফেলিস আমায়, টুকরো টুকরো হয়ে যাব আমি; আর আমার কথা যদি বলিস, তোর ধারে কাছে যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই আমার।”
প্রাচীন বচনঃ ঠিক ঠিক বন্ধুত্ব হয় শুধু সমানে সমানে।
আমি বলিঃ যে মহাজন সুদ দ্যান, তিনি যত-ই চিকন-চাকন হন, তারে দূরে রাখাই ভাল। তার সাথে ‘তুমিও মালিক, আমিও মালিক’ এই বেরাদরীতে গেলে আখেরে পস্তাতে হবে।
(১৯)The gnat and the Lion
এক ডাঁশ আর এক সিংহ
এক ডাঁশ এক সিংহের কাছে এসে খুব কষে তড়পাল ঃ “শোন রে সিংহ, আমি তোকে একটুও ভয় পাই না, আর তুই আমার থেকে কিছুই শক্তিশালী নোস। তোর জোরটাই বা কিসে? আঁচড়াতে পারিস নোখ দিয়ে, কামড়াতে পারিস দাঁত দিয়ে – কি এল গেল তাতে? আবার ও বলছি, শুনে রাখ, সব দিক ভেবে দেখলে আমার জোর তোর থেকে অনেক বেশী। কোন সন্দেহ থাকলে, আয়, লড়ে যা, দেখি কে জেতে।” এই বলে, সেই ডাঁশ ভোঁ ভোঁ আওয়াজ করে, ঝাঁপিয়ে পড়ল সিংহের উপরে আর একেবারে তার নাকের ডগায় দিল হুল ফুটিয়ে। সিংহ ডাঁশটাকে থাবার থাবায় মেরে ফেলতে গিয়ে নিজের-ই নখ-এ নিজেকে ক্ষত-বিক্ষত করে ভীষণ রকম কাহিল হয়ে পড়ল। ডাঁশ এইভাবে সিংহের সাথে যুদ্ধ জিতে ফেলে গোঁ গোঁ করে বিজয়-সঙ্গীত গাইতে গাইতে উড়ে চলে গেল। কিন্তু বেশীদূর যাওয়া হল না তার, সোজা গিয়ে জড়িয়ে গেল কাছাকাছি এক মাকড়সার জালে। খানিকক্ষণের পরে, চলে গেল মাকড়সার পেটে। মরার সময় ডাঁশটা খুব করে নিজের ভাগ্যকে শাপশাপান্ত করে বলে গেল, “কি দুঃখের কথা, আমি, সিংহের মত একটা মহা শক্তিশালী জন্তুকে যে অনায়াসে হারিয়ে দিয়ে এল, একটা তুচ্ছ মাকড়সাটার কাছে শেষ হয়ে গেলাম।”
প্রাচীন বচনঃ সবচেয়ে কম যাকে ভয় করা যায়, সেই দেখা যায় সবার চেয়ে বেশী ভয়ংকর হয়ে উঠল।
আমি বলিঃ একটা লড়াই জিতলেই যদি কান্ডজ্ঞান লোপ পেয়ে যায়, বাকি লড়াইগুলো আর তা হলে জিততে হবে না।
(টীকাঃ ডাঁশ = মশা জাতীয় পতঙ্গ, হুল ফুটিয়ে অবস্থা কাহিল করে ফেলে)
(২০)The Widow and her Little Maidens
এক বিধবা আর তার ছোট ছোট দুই কাজের মেয়ে
এক বিধবা মহিলার মহা বাতিক ছিল সবকিছু পরিস্কার করে রাখার। দুটি ছোট ছোট মেয়েকে সে লাগিয়ে নিয়েছিল তার কাজে। খুব খাটাত সে মেয়েগুলোকে। ভোরবেলা মোরগের কোঁকর কোঁ ডাক শোনা গেলেই সে তাদের কাজ করার জন্য ঠেলে তুলে দিত। জেরবার হয়ে গিয়ে মেয়েদুটো একদিন ঠিক করল যে মোরগটাকে শেষ করে দিলেই ওটা আর তাদের মালকিনকে জাগাতে পারবে না। যেমন ভাবা তেমন কাজ – মেরে ফেলল তারা মোরগটাকে। ফল হল এই, এবার তারা আরো মুস্কিলে পড়ে গেল। মোরগের ডাক না শুনতে পাওয়ায় তাদের মালকিন এখন সময়ের আর কোন হিসেব-ই করে উঠতে পারল না। মাঝরাত্তিরেই সে তাদের ঠেলে তুলে দিয়ে কাজ করতে লাগিয়ে দিল।
প্রাচীন বচনঃ অন্যায্য উপায়ে কাজ-এর চাপ কমাতে গেলে ঝামেলা আরো বেরে যায়।
আমি বলিঃ অসহায় যারা তারা পিষ্ট হতে হতে একসময় কোন একটা ভুল করে ফেলবে। ফলে, তখন তারা আরো বেশী করে পিষ্ট হবে। আর, নীতিনির্ধারকেরা তাদের উদাহরণ তুলে ধরে বলবে – দ্যাখো, অন্যায্য কাজ করে আখেরে লাভ হয় না। হায় রে বিচার!


(২১)The Fox and the Lion
শিয়াল আর সিংহ-র গল্প
বনে ঘুরতে ঘুরতে এক শিয়াল হঠাৎ এক সিংহের মুখোমুখি এসে পড়ল। এর আগে সে কখনো সিংহ দেখেনি। ফলে সে ত ভয়েই মরে প্রায়! তার কিছুদিন বাদে আবার সেই সিংহের সাথে দেখা সেই শিয়ালের। এইবার-ও শিয়াল ভয়ে ভয়ে ছিল, তবে প্রথমবারের মত অতটা নয়। তিন নম্বর বার যখন দেখা হল, শিয়ালের আর ভয় ত করলইনা, সে বরং সিংহের কাছে এগিয়ে গিয়ে গল্প জুড়ে দিল।
প্রাচীন বচনঃ পরিচিতি বাড়লে পুরান সংস্কার কমে।
আমি বলিঃ চালাক শক্তিমান একেবারে শুরু থেকেই হামলা করার ইচ্ছে না দেখিয়ে আস্তে, আস্তে তার শিকার-এর সতর্কতা নষ্ট করে দ্যায়।
(২২)The Town Mouse and the Country Mouse
শহরের ইঁদুর আর গাঁয়ের ইঁদুর
এক গাঁয়ের ইঁদুর তার জিগরী দোস্ত শহরের ইঁদুরকে বাড়িতে ডেকেছিল নিজের এলাকা ঘুরিয়ে দেখাবে বলে। যখন তারা ফাঁকা ক্ষেতে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, আর ঝোপের ধারে ধারে ফসলের ডাঁটি চিবোচ্ছিল বা মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে শেকড়গুলো খাচ্ছিল, শহরের ইঁদুর তার বন্ধুকে বলল “পিঁপড়ের মত খুঁটে খেয়ে খেয়ে তোর জীবন কাটে আর, আমার ওখানে জিনিসের ছড়াছড়ি। যত রকমের খাবার ভাবতে পারিস, সব আছে আমার কাছে। একবার যদি আসতে পারতিস, দেখাতাম তোকে, আয়, আয়, চলে আয়, সেরার সেরা খাবার ভাগাভাগি করে খাব আমরা।” গাঁয়ের ইঁদুর সহজেই রাজী হয়ে গেল, বন্ধুর সাথে শহরে বন্ধুর বাড়িতে চলে এল। শহরের ইঁদুর বন্ধুর সামনে এনে হাজির করল রুটি, বার্লি, বীন, শুকনো ডুমুর, মধু, কিসমিস, আর সবশেষে একটা ঝুড়ি থেকে, সেরার সেরা সুস্বাদু খাবার – এক টুকরো চীজ। এত রকমারী সব খাবার দেখে, গাঁয়ের ইঁদুর তো তাজ্জব! সমানে শহরের ইঁদুর-কে বাহবা জানাতে লাগল আর নিজের দুর্ভাগ্যকে দোষ দিতে থাকল। সবে তারা খাওয়া শুরু করতে যাচ্ছে, ঘরের দরজা খুলে একটা লোক ভিতরে ঢুকে এল, আর দুই ইঁদুর এক দৌড়ে এক সরু গর্তে একজন আরেকজনের ঘাড়ের উপর চেপে কোনমতে নিজেদের লুকিয়ে রাখল। একটু বাদে ঠিক যখন আবার তারা খাওয়া শুরু করবে, কেউ একজন ঘরে এসে পড়ল কাবার্ড থেকে কিছু বার করে নেবে বলে। ইঁদুর দুটো আরো ভয় পেয়ে পড়ি-মরি করে লুকিয়ে পড়ল। খানিকক্ষণ বাদে, গাঁয়ের ইঁদুর, তখনো তার বুক ধড়ফড় করছে, বন্ধুকে বলল, “যদিও আমার জন্য সেরার সেরা খাবারের মেলা বসিয়ে দিয়েছ তুমি, আমি সব খাবার তোমার একলার খাওয়ার জন্যই রেখে যাচ্ছি। আনন্দ করার জন্য আমার পক্ষে এই জায়গা বড়ই বিপজ্জনক। ”
প্রাচীন বচনঃ বিপদ-আপদ-এ ঘেরা বিপুল ঐশ্বর্যের চেয়ে নিরাপদে একটু খুদ-কুঁড়ো খাওয়াও অনেক স্বস্তির। (সুখের চেয়ে স্বস্তি ভাল।)
আমি বলিঃ মাথা উঁচু রেখে চলা যাদের অভ্যাস, লুকিয়ে-চুরিয়ে বাঁচা, যত কিছুই জুটুক, তাদের তাতে পোষায় না।
(২৩)The Monkey and the Dolphin
বাঁদর আর শুশুক-এর গল্প
এক নাবিক দূর সমুদ্র যাত্রায় যাওয়ার সময় মাঝে মাঝে বাঁদরের খেলা দেখে একঘেয়েমি কাটানোর জন্য একটা বাঁদরকে সাথে নিয়ে নিয়েছিল। গ্রীসের সমুদ্রতীরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ভীষণ ঝড়ে পরে তাদের জাহাজ ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। সেই নাবিক, তার বাঁদর আর জাহাজের সমস্ত লোকেরা যার যার প্রাণ বাঁচানোর জন্য ডাঙ্গার দিকে সাঁতরে চলল। একটি শুশুক, যে সব সময় মানুষকে সাহায্য করতে ভালবাসে, এদের বাঁচাতে এগিয়ে এল। বাঁদরটাকে মানুষ ভেবে সেই শুশুক ঐ বাঁদর-এর নীচে চলে এসে তাকে পিঠে করে ডাঙ্গার দিকে সাঁতরে চলল। যখন তারা এথেন্স এর তীরের কাছাকাছি এসে গেছে, শুশুক তার পিঠের সওয়ারীর কাছে জানতে চাইল যে সে এথেন্স-এর লোক কি না। বাঁদর বলল যে, সে এথেন্স-এর লোক, শুধু তাই না, সে এথেন্স-এর সবচেয়ে মহান এক পরিবারে জন্মেছে।
শুশুক এবার তার কাছে জানতে চাইল সে পাইরিয়াস সম্পর্কে কিছু জানে কি না। পাইরিয়াস হচ্ছে এথেন্স-এর বিখ্যাত বন্দরের নাম। বাঁদর ভাবল পাইরিয়াস কোন লোকের নাম। নিজের একটু আগে বলা মিথ্যা কথাকে চালিয়ে যাওয়ার জন্য সে উত্তর দিল যে পাইরিয়াস-কে সে ভালমত চেনে, এমন কি, সেই লোক তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, আর তাকে দেখে সে, কোন সন্দেহ নেই, খুব-ই খুশী হবে। বাঁদরের এই জালিয়াতি-তে সেই শুশুক সাংঘাতিক রেগে গিয়ে তাকে জলের নীচে চুবিয়ে মেরে ফেলল।
প্রাচীন বচনঃ একবার একটা মিথ্যা কথা বলা শুরু করলে সেটাকে ঢাকতে আর একটা, এইভাবে ক্রমাগত মিথ্যা বলে যেতে হয় আর তার ফলে, আজ হোক আর কাল হোক, একসময় বিপদ ঘনিয়ে আসে।
আমি বলিঃ অন্যের দয়ায় থেকে মিথ্যে বলেও বেশীদিন বাঁচা যায় না!
(২৪)The Game-cocks and the Partridge
লড়ুয়ে মোরগ আর বাতাই পাখীর গল্প
এক লোকের দুটো লড়ুয়ে-মোরগ ছিল। একদিন বাজারে একটা পোষা বাতাই পাখী বিক্রী হচ্ছিল। পাখীটা দেখে লোকটির এত ভাল লেগে গেল, সে ওটা কিনে বাড়ি নিয়ে এল। তার ইচ্ছে, মোরগ দুটোর সাথে থেকে এই পাখীটাও তৈরী হয়ে যায়। যেই মাত্র সে বাতাই-টাকে মোরগের খামারে ছেড়েছে, মোরগ দুটো ঝাঁপিয়ে এসে পড়ল ওটার উপর। দুটোতে মিলে পাখীটাকে ভয়ানক দৌড় করালো। মনের দুঃখে মুষড়ে পড়ে পাখীটা ভাবতে লাগল যে, সে নুতন এসেছে বলেই তার এমন দুর্দশা ঘটল। খানিকক্ষন না কাটতেই বাতাইটা দেখে মোরগ দুটো নিজেরাই তুমুল লড়াই লাগিয়ে দিয়েছে। যতক্ষণ না একজন আরেকজনকে ভীষণ রকম পিটল, লড়াই চালিয়েই গেল তারা। সেই দেখে পাখীটা নিজের মনেই বলল, “এই লড়ুয়ে-মোরগ দুটো যখন নিজেদের মধ্যেই ঝগড়া না করে থাকতে পারে না, তখন আমার সাথে কেন তারা লেগে পড়ল সেই নিয়ে ভেবে ভেবে হয়রান হওয়ার কোন অর্থ হয় না।”
প্রাচীন বচনঃ যারা নিজেদের মধ্যেই ঝগড়া করে, নুতন লোকেদের পক্ষে তাদের এড়িয়ে চলাই মঙ্গল।
আমি বলিঃ যারা নিজেরা নিজেদের দেখতে পারে না, তারা অন্য লোকেদের-ও দেখতে পারবে না।
(২৫)The Boy and the Nettle
এক বাচ্চা ছেলে আর বিছুটি পাতার গল্প।
একটি বাচ্চা ছেলের হাতে নরম কিন্তু বিষাক্ত শুঁয়ো-ওয়ালা বিছুটি পাতা লেগে যায়। বাচ্চাটি তার মা’র কাছে ছুটে গিয়ে বলে, “এত ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে, আমি কিন্তু ওটা আলতো করে ছুঁয়েছিলাম।” “সেটাই তো ব্যাপার,” মা তাকে বোঝায় তখন, “তার ফলেই তো রোঁয়াগুলো তোমার হাতে ঘষে ঘষে গেল আর সেগুলো থেকে হুল ফুটে গিয়ে এখন জ্বলে যাচ্ছে। আবার যদি কখনো বিছুটি পাতা ধরো, সাহস করে, ঠিক মত, শক্ত করে, না ঘষে ধরবে, ঐ রোঁয়াগুলো-ই তখন চুপটি করে নরম সিল্কের মত শুয়ে থাকবে, কোন ঝামেলা করবে না।”
(টীকাঃ ইংরেজীতে গাছটির নাম বলা হয়েছে Nettle, আন্তর্জালে অনেক খোঁজাখুঁজি করে বাংলা অনুবাদ-এ বিছুটি পাতার থেকে কাছাকাছি কিছু পাই নি। বিছুটি পাতা এইভাবে শক্ত করে ধরলে জ্বালা-চুলকানির কবলে পড়ার থেকে রেহাই পাওয়া যায় কি না আমার জানা নেই। )
প্রাচীন বচনঃ যা-ই করো, আলগা, আলগা নয়, পুরো শক্তি লাগিয়ে করো।
আমি বলিঃ আগে ভাল করে জেনে নাও কী করতে যাচ্ছ, কি ভাবে করতে হবে, তার পর করো, জ্বালা পোহানোর সম্ভাবনা কম থাকবে।
— — —
২৪ নং গল্পটিতে ইংরেজী অনুবাদে পাখীটিকে বলা হয়েছে Partridge. তারেক অণুর পাখীর নাম সংক্রান্ত লেখার ফলে জেনেছি যে এই পাখীর বাংলা নাম বাতাই। অণুর লেখাটি বাদ দিয়ে এই গল্পটি এ ভাবে অনুবাদ করা সম্ভব হত না।
অণু-দাদা, আজকের পাতাটা তোমার-ও পাতা।


ঈশপের নীতিগল্পগুলি, যত দিন যাচ্ছে, জীবনের চলার পথে আরো বেশী করে অনুভব করছি। সম্প্রতি ইচ্ছে হ’ল সে’গুলি ফিরে পড়ার, ধরে রাখার – নিজের মত করে।
অনুবাদ ইংরেজী পাঠের অনুসারী, আক্ষরিক নয়। সাথে আমার দু-এক কথা। 

[গল্পসূত্রঃ R. Worthington (DUKE Classics)-এর বই এবং আন্তর্জাল-এ লভ্য http://www.aesop-fable.com -এ ইংরেজী অনুবাদের ঈশপের গল্পগুলি।

গল্পক্রমঃ R. Worthington-এর বইয়ে যেমন আছে]
(২৬)The Trumpeter taken Prisoner
বন্দী ভেঁপু-বাজিয়ে
এক ভেঁপু-বাজিয়ে বুক-চিতিয়ে, জোরদার ভেঁপু বাজাতে বাজাতে সেনাদল নিয়ে যাওয়ার সময় শত্রুদের হাতে বন্দী হয়ে গেল। ভেঁপু-বাজিয়ে কেঁদে কেটে প্রাণভিক্ষা চাইলঃ “আমাকে দয়া করে ছেড়ে দিন। আমাকে ছেড়ে না দেওয়ার কোন কারণ নেই, আমি কাউকে আঘাত করিনি। আপনার সৈন্যদের কাউকে খুন করিনি আমি। আমার কাছে কোন অস্ত্র নেই। থাকবার মধ্যে আছে শুধু এই পিতলের ভেঁপুটা।” “ঠিক এই কারণেই তো তোকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া দরকার,” বলল তারা, “তুই নিজে যুদ্ধ না করলে কি হবে, তোর ঐ প্রবল ভেঁপুর বাজনাই তোদের সৈন্যদের যুদ্ধের উৎসাহ দিয়ে গেছে।”
প্রাচীন বচনঃ যে অশান্তি পাকায় আর যে অশান্তি পাকানোয় মদত দ্যায় দুজনেই সমান দোষী।
আমি বলিঃ কোন সংবাদ পত্রিকা, দূরদর্শন বা বেতার চ্যানেল, ব্লগ, গোষ্ঠী, দল বা ব্যক্তি, যে কেউ দাঙ্গায় প্ররোচনা দিলে দাঙ্গা-জনিত খুন বা ধ্বংসের দায়িত্ব দাঙ্গাকারীদের পাশাপাশি তাদের উপরেও বর্তায়।
সতর্কীকরণ ঃ মতামত মাত্রই খুন বা ধ্বংসের প্ররোচনা নয়। উপরে বলা দায়িত্ব সংক্রান্ত কথা কেবল মাত্র প্ররোচনা সম্পর্কে বলা হয়েছে।
(২৭)The Fatal Marriage
বিয়ে করে প্রাণ গেল
এক ইঁদুর খুব ভাল কাজ করে বনের রাজা সিংহ-র মন জয় করে ফেলল। তবে, সিংহ হচ্ছেন রাজামশায়। মহৎ কাজে বনের অন্য কোন জন্তু তাকে ছাড়িয়ে যাবে এটা তিনি হতে দিতে পারেন না। তাই তিনি অত্যন্ত উদার হয়ে ইঁদুরকে বললেন তার যা মন চায় তাকে জানাতে, তিনি তা মঞ্জুর করে দেবেন। এই বিরাট আশ্বাস পেয়ে ইঁদুরের উচ্চাশা একেবারে আগুনের শিখার মত লকলক করে উঠল। কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক, কতটা রাজামশাইয়ের পক্ষে দেওয়া সম্ভব, কতটা নয়, কোন বিচার-বিবেচনা রইলনা তার। সে দাবী করে বসল, মহারাজের মেয়ে তরুণী সিংহী রাজকুমারীর সাথে তার বিয়ে দিতে হবে। সিংহরাজ তার কথা রাখলেন, রাজকুমারীকে ইঁদুরের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। কিন্তু রাজকুমারী, সিংহের চলন তার, নিজের তালে হেঁটে যায়, এদিক-ওদিক ভাল করে তাকিয়ে না দেখে ইঁদুরের উপর তার ভারী পা দিল চাপিয়ে। আর কি, ইঁদুর চিঁড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে মরে গেল।
প্রাচীন বচনঃ বেমানান জোড় বাঁধা থেকে সাবধান। অতি উচ্চাশা নিয়ে জোট গড়া মানে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনা।
আমি বলিঃ খুব বড়দের থেকে দূরে দূরে থাকতে না পারলে যে কোন সময় তাদের নীচে চাপা পড়ে মরতে হতে পারে।
(২৮)The Ass and the Charger
এক গাধা আর এক লড়াইয়ের ঘোড়া।
এক লড়াইয়ের ঘোড়া খুব যত্ন-আত্তিতে ছিল। এক গাধা তাই দেখে তাকে খুব করে বাহবা জানাল কারণ তার নিজের খুব অল্প-ই খাবার জুটত, আর সেটাও জুটত অনেক পরিশ্রম করে। কিন্তু একদিন সেখানে যুদ্ধ শুরু হতে সেই ঘোড়ার পিঠে অস্ত্র-শস্ত্রে সুসজ্জিত সৈনিক সওয়ারী চাপিয়ে তাকে যুদ্ধে পাঠিয়ে দেওয়া হল। যুদ্ধক্ষেত্রে আহত হয়ে ঘোড়াটা এক সময় মারা পড়ল। সব দেখে শুনে গাধা তার মত পাল্টে ফেলে বলল, “ঐ লড়াইয়ের ঘোড়ার থেকে আমি কত ভাগ্যবান! আমি নিশ্চিন্তে বাড়ি আছি, আর ঐ লড়াইয়ের ঘোড়া যুদ্ধের ভয়াবহ সব যন্ত্রণা ভোগ করে মারা পড়েছে।”
প্রাচীন বচনঃ অন্যের ভাল অবস্থা দেখামাত্র তাকে হিংসা করার কোন অর্থ হয় না।
আমি বলিঃ বেশী, বেশী যত্ন-আত্তির সুখ বেশীদিনের জন্য নয়, বিপদ এল বলে। আর, যার আদর আহ্লাদ জোটে না, তার অতিরিক্ত কোন মাসুল গোণার-ও ভয় থাকে না।
(২৯)The Vain Jackdaw
এক ফালতু পাতিকাক-এর গল্প
লোকে বলে, দেবরাজ ইন্দ্র যখন ঠিক করে ফেললেন যে পাখীদের জন্য রাজ্য গড়ে দেবেন, তিনি ঘোষণা দিয়ে দিলেন যে এক নির্দিষ্ট দিনে সব পাখীরা তাঁর সামনে এসে জড় হলে তিনি তাদের মধ্যে থেকে সবচাইতে যাকে সুন্দর দেখতে তাকেই পাখীদের রাজা বেছে নেবেন। এ কথা শুনে এক পাতিকাক, সে তো ভালমতই জানে কি কুচ্ছিৎ দেখতে তাকে, মাঠে-ঘাটে-বনে-বাদাড়ে ঘুরে ঘুরে নানা পাখীদের গা থেকে খসা রকমারী সব পালক যোগাড় করে আনল। এরপর ঐ পালকগুলো নিজের সারা গায়ে গুঁজে নিয়ে খুব বাহার দিয়ে নির্দিষ্ট দিনে আর সব পাখীদের সাথে দেবরাজের সামনে হাজির হয়ে গেল। পাতিকাক-এর চেহারায় মুগ্ধ হয়ে দেবরাজ যেই প্রস্তাব রেখেছেন যে তাকে রাজা হিসেবে বেছে নেওয়া হোক, পাতিকাকের জোচ্চুড়িতে সমস্ত পাখীরা ভীষণ রেগে গিয়ে বিস্তর চ্যাঁচামেচি জুড়ে দিল। আর সেই সাথে, প্রত্যেক পাখী পাতিকাক-এর গা থেকে নিজের নিজের পালক খুবলে খুবলে বার করে নিল। পাতিকাক তখন আবার এক মামুলি পাতিকাক হয়ে গেল।
প্রাচীন বচনঃ ধার করা সাজ-সজ্জায় কাজ হাসিল করতে পারার আশা না করাই ভাল।
আমি বলিঃ সমাজের দায়িত্বশীলরা যখন ঠাট-বাটকে মান্যতার মাপকাঠি করে ফোঁপরা বাহারী মানুষকে মাথায় বসান, তার মোকাবিলা করতে করতে ভুক্তভোগীদের আর অশান্তির শেষ থাকে না, মাথায় চড়া লোকটার-ও দুদিনেই আসল রূপ বেড়িয়ে পরে, কাজের কাজ পুরোই পন্ড।
(৩০)The Milkmaid and her Pot of Milk
গোয়ালিনী আর তার মাথার দুধের বালতি
এক গোয়ালিনী মাথায় দুধের কলসী নিয়ে দুধ বেচতে চলেছে। চলতে চলতে মনটা তার খুশী খুশী হয়ে উঠেছে। “এই দুধ বেচে যা টাকা পাবো তাতে অন্তত তিনশ’ ডিম কিনে ফেলা যাবে। সেই ডিম দিয়ে মুরগীর চাষ শুরু করলে কিছু নষ্ট হলেও কম করে আড়াইশো মুরগীর ছানা পাওয়া যাবে। মুরগীর দাম যখন সবচেয়ে চড়ে উঠবে, এই মুরগীগুলো তখন বেচার জন্য তৈরী হয়ে গেছে। বছর শেষে যা টাকা হাতে জমবে তা দিয়ে একটা নুতন পোষাক কিনে ফেলব। সেটা পরে যখন আমি ক্রিসমাস-এর উৎসবে হাজির হবো, সব ছেলেগুলো আমায় পেতে চাইবে। কিন্তু আমি রাজী হচ্ছি না, পরিস্কার মাথা নেড়ে সব্বাইকে না করে দেব।” ভাবতে ভাবতে তার মাথাটা ভাবনার তালে তালে নড়ে গেল। ফলে মাথা থেকে দুধের কলসী মাটিতে পড়ে ভেঙ্গে শত টুকরো হল, আর সেই সাথে অমন চমৎকার পরিকল্পনাগুলোও এক মুহুর্তে সব শেষ।
প্রাচীন বচনঃ ডিম ফোটার আগেই মুরগীর ছানার হিসেব করতে নেই।
আমি বলিঃ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখার সময় এখন কি করছি সেটা ভুললে চলে না।

price/৳15.00

size/pdf

off/50%


যোগাযোগ ফর্ম

Name

Email *

Message *